পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সেক্টরের ২৪টি কারখানাকে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি উত্তম চর্চা পুরস্কার’ প্রদান করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছে। ২৮ এপ্রিল ২০১৯ বিকেলে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০১৯’- উপলক্ষে রাজধানীর কেআইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় এই পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়।
২৪ টি কারখানার মধ্যে বিকেএমই-এ সদস্যভুক্ত ৫টি পোশাক কারখানা হলো: প্লামি ফ্যাশনস লি., উইজডম অ্যাটায়ার্স লি., নাফিসা অ্যাপারেলস লি., মাদার কালার লি., ফতুল্লা অ্যাপারেলস এবং বিজিএমইএ এর সদস্যভুক্ত ৭টি পোশাক কারখানা হলো: কমফিট কম্পোজিট নীট লি., লায়লা স্টাইলস লি., ইপিলিয়ন স্টাইল লি., ইকোফ্যাব লি., অনন্ত গার্মেন্টস লি., ক্রাউন ওয়্যারস প্রাইভেট লি., জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লি.।
ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরের ৩টি কারখানা হলো: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লি., বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি., সানোফি বাংলাদেশ লি., এবং চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ৩টি কারখানা হলো: ম্যাফ সুজ লি., অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লি., পিকার্ড বাংলাদেশ লি.।
চা শিল্প সেক্টরের ৩টি কারখানা হলো: জেরিন প্লান্টেশন লি., মধুপুর টি এস্টেট, শমসেরনগর চা বাগান এবং ৩টি জুট শিল্প কারখানা হলো: জনতা জুট মিলস লি., ওহাব জুট মিলস লি., নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লি.।
উল্লেখ্য, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কে দেশব্যাপী সচেতনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো আজ ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০১৯’ পালিত হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নিরাপদ কর্মপরিবেশ, টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ’।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে জনাব টিপু মুনশি বলেন, “পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। শ্রমিকদের দেখভাল না করলে শ্রমিকরা কীভাবে কাজ করবে?।”
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কর্মক্ষেত্রে সেইফটি নিশ্চিত করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই অধিদপ্তর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তর নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।”
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জনাব উম্মুল হাসনা তাঁর বক্তব্যে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি উত্তম চর্চার তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ব্যবসার উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে কারিগরি উদ্ভাবন, দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের উপর। কর্মীবাহিনীর কল্যাণ সাধনে ব্যবসায় সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে পেশাগত সেইফটি ও স্বাস্থ্য উত্তম চর্চা পুরস্কার প্রবর্তন করে।”
বাংলাদেশে কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও সেইফটি কমপ্লায়েন্স তদারকি করে থাকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফ)। ডাইফের মহাপরিদর্শক জনাব শিবনাথ রায় এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুরস্কার প্রাপ্তদের অভিনন্দিত করে বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে আমাদেরকে অবশ্যই নিরাপদ ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পউটিয়াইনেন বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে সেইফটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার অব্যাহত প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশ সরকার, ডাইফ, মালিক ও শ্রমিক সংস্থাসমূহ, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ক্রমাগত জেনে এসেছে কীভাবে এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের শিল্প দুর্ঘটনা ও মন্দ কর্মপরিবেশ থেকে রক্ষা করতে হয়। এসব শিক্ষা সকল শিল্প সেক্টরে প্রয়োগের সময় এসেছে। আর কর্মক্ষেত্রে সেইফটি ও স্বাস্থ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য যেকোনো নতুন উদ্যোগকে সমর্থন করতে আইএলও প্রস্তুত।”
উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের হাই কমিশনার মান্যবর হ্যারি ভারওয়েজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “পেশাগত সেইফটি ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি, একই সাথে আমরা আমাদের দেশের ব্রান্ড ও ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা পণ্য ক্রয়ে আরো দায়িত্বশীল হন এবং বাংলাদেশের কারখানাসমূহে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করেন।”
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক পেশাগত সেইফটি ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিজিএমই এর কাজকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে গ্রিন ফ্যাক্টরি সবচেয়ে বেশি কিন্তু আমরা পোশাকের গ্রীন (ন্যায্য) মূল্য পাচ্ছি না। আমাদের দেশের শ্রমিকদের অসংখ্য সাকসেস স্টোরি আছে। এগুলো সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে হবে।”
আলোচনা সভায় অন্যানের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি, এবং দেশি-বিদেশি দাতাসংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।