শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব কে, এম, আব্দুস সালাম বলেছেন শ্রমিক-মালিক, গরীব-ধনী দেশের সকল নাগরিকই সমমর্যাদা সম্পন্ন। এখন বিপদে-দুর্যোগে কেউ আর একা নয়, সরকার আছে সবার পাশে। ২৪ অক্টোবর ২০২০ তারিখ নেত্রকোণা জেলার বিভিন্ন উপজেলার অসহায় শ্রমিকদের চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা বাবদ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে শ্রম সচিব এসব কথা বলেন।
মাননীয় সচিব মহোদয় বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের সকল মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্তর্ভূক্তিমূলক বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল হতে গরীব-অসহায়-দুঃস্থ শ্রমিকের চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অনধিক ১ লক্ষ টাকা এবং সরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রমিকদের সন্তান লেখাপড়া করলে তাদের পড়াশোনার জন্য শিক্ষা সহায়তা অনুদান হিসেবে অনধিক ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক মারা গেলে মৃত শ্রমিকের অসহায় পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয় এবং কর্মরত নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সময়ে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য ২৫ হাজার টাকা এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও দূর্গাপুর উপজেলার ন্যায় দূরবর্তী উপজেলার শ্রমিকদের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির বিষয় সম্বন্ধে অবগত করতে এবং তারা যাতে সহজে এ সহায়তা পান সে জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার শ্রমিক, শ্রমিক প্রতিনিধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে যথাযথভাবে অবগত করতে তাদের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করতে সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ প্রদান করনে।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেক প্রাপ্তির জন্য মনোনীত আবেদনকারী সুবিধাভোগীকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চেক প্রদান করতে হবে মর্মে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র ৯ম বৈঠকের মূলতবী বৈঠকে এ সংক্রন্ত গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি নেত্রকোণা জেলায় চেক বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করলেন। ভবিষ্যতেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং এর স্থানীয় কার্যালয় কর্তৃক এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি সকলকে আশ্বস্ত করেন।
শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মালিক-শ্রমিকদের দায় দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৩১ দফা নির্দেশনার মধ্যে কলকারখানা সংশ্লিষ্ট এ সংক্রান্ত তিনটি বিশেষ বিধান রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে আহবান জানান। তিনি বলেন, এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করে শিল্প কারখানা পরিচালনা করা হচ্ছে কিনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করছে। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় ময়ংমনসিংহ বিভাগের ০৪ টি জেলার ৩৫ টি উপজেলার কারখানা-প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন বাস্তবায়নে এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করছে।
জেলা প্রশাসক, নেত্রকোণা মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নেত্রকোণা পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম খান প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রমিকদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া নানামুখী উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি সকলকে অন্তর্ভূক্ত করে নেত্রকোণা জেলার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণের মাধ্যমে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নেত্রকোণাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য যে, এ দিন মোট ৪৫ জনকে ১৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক, নেত্রকোণার পক্ষে অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সভাপতির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত দপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালানোর জন্য আহবান জানান।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে মৃত শ্রমিক মো: জিন্নত আলীর স্ত্রী মিলন আক্তার আর্থিক অনুদান প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও মাননীয় সচিব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক জনাব রাজীব চন্দ্র ঘোষ তার দপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান মহোদয়ের নেতৃত্বে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর কারিগরি সহযোগিতায় ইতোমধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক ‘কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং জাতীয় শিল্প, স্বাস্থ্য ও সেইফটি কাউন্সিল কর্তৃক উক্ত নির্দেশিকা অনুমোদিত হয়েছে। বিগত মে/২০২০ মাস হতে চলতি অক্টোবর/২০২০ মাস পর্যন্ত সময়কালে ৬৮৮ টি কারখানা-প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিদর্শন পরিচালনা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অংশীজনদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৭ টি উদ্বুদ্ধকরণ সভা আয়োজন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দপ্তর কর্তৃক এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব অনুদান প্রাপ্তির আবেদন ফরম পাওয়া যায়। অনুদান পেতে আগ্রহী আবেদনকারীদেরকে আবেদন করতে সহায়াতা করার জন্য উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদেরকে অনুরোধ করেন। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদান প্রাপ্তির জন্য কেহ তার দপ্তরে আবেদন করলে এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর ময়মনসিংহ-এর সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ রকিবুল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা জেলার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ এবং আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, ময়মনসিংহের কর্মকর্তাবৃন্দ। শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) নন্দন চক্রবর্তী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।